হতাশায় আশার আলো ডেল কার্নেগি

হতাশায় আশার আলো ডেল কার্নেগি



হতাশায় আশার আলো ডেল কার্নেগি

ডেল কার্নেগি



ডেল ব্রাকেনরিডজ কার্নেগি ছিলেন একজন আমেরিকান লেখক, অধ্যাপক ও একাধারে বিখ্যাত আত্ম-উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণমালার উদ্ভাবক। তিনি দরিদ্র মিজুরি কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। প্রথম জীবনে তেমন সাফল্য না পেলেও এখন সারা বিশ্বে একজন সফল ব্যক্তিত্ব হিসেবে অমর হয়ে আছেন তিনি। তার প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নিয়ে হাজার হাজার হতাশ মানুষ আশার আলো দেখেছেন। মানুষকে সফল হতে তিনি উদ্দীপনামূলক অনেক বই লিখেছেন। এ বইগুলো আজও অনেকের আগ্রহের বিষয়। তার লেখা পড়ে তারা উদ্বুদ্ধ হোন। তার কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করে লাভ করেন সাফল্য। উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেটের তথ্য অবলম্বনে ডেল কার্নেগির জীবনকথা গ্রন্থনা করেছেন-
ডেল ব্রাকেনরিডজ কার্নেগি ছিলেন একজন আমেরিকান লেখক, অধ্যাপক ও একাধারে বিখ্যাত আত্ম-উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণমালার উদ্ভাবক। যেমন- সেলফ-ইম্প্র“ভমেন্ট, সেলসম্যানশিপ, করপোরেট ট্রেনিং, পাবলিক স্পিকিং, ও ইন্টার পার্সোনাল স্কিল । তিনি দরিদ্র মিজুরি কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার লেখা ‘হাউ টু উইন ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ইনফ্লুয়েন্স পিপলস’ ১৯৩৬ সালে প্রকাশিত বইটি আজ প্রচণ্ড জনপ্রিয়। সে সময় বইটি বেস্ট সেলারের মর্যাদা পায়। তিনি ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত হাউ টু স্টপ ওরিং অ্যান্ড স্টার্ট লিভিং, লিঙ্কন দ্য আননোন এবং আরও অনেক বইয়েরও লেখক। তার বইয়ের বিশেষত্ব- নিজের প্রতিক্রিয়ার ভিন্নতার মধ্য দিয়ে অন্যের ব্যবহারে পরিবর্তন আনা সম্ভব।
জন্ম ও ছেলেবেলা

ডেল কার্নেগি ১৮৮৮ সালে মেরিভিলে, মিজুরিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার নামের কার্নাগি ছিল ১৯২২ সাল পর্যন্ত, সম্ভবত এর কিছুদিন পরেও। কার্নেগি ছিলেন অত্যন্ত দরিদ্র কৃষক পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান। বাবা জেমস উইলিয়াম কার্নাগি ও মা আমান্দা এলিজাবেথ হারবিসন। বালক বয়সে তিনি প্রতিদিন ভোর চারটায় উঠে গৃহপালিত গরুগুলো থেকে দুধ দোয়াতেন। এ কাজের ভেতরেও তিনি ওয়ারেন্সেবার্গের সেন্ট্রাল মিশৌরি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা চালিয়ে যান।

কর্মজীবন

কলেজ শেষে তার প্রথম চাকরিটি ছিল সেলিং করোস্পন্ডেন্স কোর্সেস টু রেঞ্জারস। পরে তিনি আর্মর অ্যান্ড কোম্পানির জন্য বাকন (লবণ জারিত শূকরের মাংস), সাবান এবং লার্ড (শূকরের চর্বি মিশ্রিত করা) তৈরি করতেন। তিনি ফার্মের প্রধান হিসেবে তার সেলস টেরিটরি দক্ষিণ ওমাহ, নেব্রারাস্কতে সফলতা লাভ করেন। ১৯১১ সালে ৫০০ ইউএস ডলার সঞ্চয়ের পর তিনি তার বহুদিনের অধ্যাপক হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিক্রয় সেবা ত্যাগ করেন। তিনি নিউইয়র্ক আমেরিকান একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্টসে যোগ দেন। একবার একটি রোড শো ‘পলি অব দ্য সাইকেলে’ তিনি ড. হার্টলির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু অভিনেতা হিসেবে তেমন সাফল্য পাননি। প্রডাকশন বন্ধ হয়ে গেলে তিনি নিউইয়র্ক প্রত্যাবর্তন করেন। চাকরিহীন অবস্থায় ব্রোকের কাছে ওয়াইএমসিএ-এর ১২৫ নম্বরে বাস করতে শুরু করেন। পাবলিক স্পিকিংয়ের ধারণাটি তিনি ওখানেই লাভ করেন। ৮০% মোট লভ্যাংশে তিনি ওয়াইএমসিএ পরিচালকের কাছে শিক্ষা প্রদানের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি তার প্রথম সেশনে ইম্প্রভাইজিংয়ের ওপর আলোচনা শেষ করেন ও ছাত্রদের ‘রাগান্বিত হয় এমন কিছু’ বিষয়ের ওপর বক্তৃতা প্রদান করতে বলেন। শ্রোতার সামনে ভয়হীন বক্তব্য প্রদানের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। এভাবে ১৯১২ সালের শুরুতে ডেল কার্নেগি কোর্সের সূচনা করেন। কার্নেগি আমেরিকানদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করেছিলেন। প্রতি সপ্তাহে এতে তার আয় দাঁড়াত ৫০০ থেকে ১০ হাজার ইউএস ডলার।

সফল্য ও অবদান

সম্ভবত তার সফলতার সূচনা ঘটে নামের শেষ অংশ কার্নাগি থেকে কার্নেগিতে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। তিনি তা করেন সেসময়ের বহুল শ্রদ্ধেয় ও পরিচিত ব্যক্তিত্ব এন্ড্র– কার্নেগির নামে। ১৯১৬ সালে ডেল কার্নেগি হল ভাড়া নিতে সক্ষম হন। কার্নেগির লিখিত সংগ্রহশালার প্রথম প্রকাশ ‘পাবলিক স্পিকিং : এ প্র্যাক্টিক্যাল কোর্স ফর বিজিনেস ম্যান’ (১৯৩২)। তার সেরা অবদান ‘হাউ টু উইন ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ইনফ্লুয়েন্স’ বইটি। ১৯৩৬ সালে বইটি প্রথম আত্মপ্রকাশের পর বেস্ট সেলারের স্বীকৃতি পেয়েছিল। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে ১৭তম মুদ্রণও জোটে বইটির ভাগ্যে। কার্নেগির মৃত্যু নাগাদ বইটি বিশ্বের ৩১টি ভাষায় রচিত পাঁচ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছিল এবং সাড়ে চার লাখের মতো ছাত্র কার্নেগির প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক লাভ করে। এছাড়া তার উল্লেখযোগ্য বইগুলো হচ্ছে- আত্মবিশ্বাসে সাফল্য ও বক্তৃতা শেখা, স্বামীর সাফল্যে স্ত্রীর কর্তব্য, দুশ্চিন্তাহীন নতুন জীবন, ধনী যদি হতে চান, ধনী হওয়ার অব্যর্থ ৫৫ উপায় ও প্রতিপত্তি ও বন্ধুলাভ। ডেল কার্নেগি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইউএস সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করেছিলেন।

কার্নেগির প্রশিক্ষণ

ডেল কার্নেগির প্রশিক্ষণ হচ্ছে ব্যবসায়ের জন্য একটি শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম, যার ভিত্তি কার্নেগির শিক্ষা-প্রণালী। ৮০টিরও বেশি দেশে উপস্থাপিত হয়ে ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ও বিশ্বজুড়ে ৮০ লাখ লোক কার্নেগির এই শিক্ষা পদ্ধতি গ্রহণ করেন। কোর্সটি মূলত একটি মালিকানা পদ্ধতি, টিম ডাইনামিক্স ও ইন্ট্রা-গ্রুপের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আন্তঃপারস্পরিক সম্পর্ক, চাপ সহনীয় ও দ্রুত পরিবর্তনীয় কর্মক্ষেত্রের অবস্থা মোকাবেলায় শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। অন্য বিষয়গুলোও এতে প্রাধান্য পায়। যোগাযোগ, সৃজনশীল সমস্যা সমাধান ও নেতৃত্ব গঠনেও ভূমিকা পালন করে। কোর্সটির মূলত ৫টি ধাপ, যা ধারাবাহিক উন্নয়নচক্র নামে গঠিত : ১. দৃঢ় আত্মবিশ্বাস গঠন ২. লোকদক্ষতা বাড়ানো ৩. যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানো ৪. নেতৃত্বের উন্নয়ন ৫. চারিত্রিক উন্নয়ন ও চাপ কমানো।

ব্যক্তিজীবন ও মৃত্যু

ডেল কার্নেগি ১৯২৭ বিয়ে করেন ললিতা বাউকেরকে। তার প্রথম বিবাহিত জীবন ছিন্ন হয় ১৯৩১ সালে। এরপর ৫ নভেম্বর ১৯৪৪ সালে তিনি ডরোথি প্রাইস ভেন্ডারপোলকে বিয়ে করেন। ডরোথিও পরে বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করেন। ভেন্ডারপোলের ঘরে দুটি মেয়ে ছিল। প্রথম মেয়ে রোসমেরি ভেন্ডারপোলের প্রথম ঘরের সন্তান। কার্নেগির ঘরে জন্ম নেন ডনা ডেল কার্নেগি। ডেল কার্নেগি ৬৬ বছর বয়সে ইউরেমিয়া জটিলতাসহ হকিংস রোগে মারা যান ১ নভেম্বর ১৯৫৫। তিনি নিজ বাড়ি ফরেস্ট হিলস, কুইন্স, নিউইয়র্কে মৃত্যুবরণ করেন।

একনজরে ডেল কার্নেগি

* নাম : ডেল ব্রাকেনরিডজ কার্নেগি

* জন্ম : ২৪ নভেম্বর ১৮৮৮

* স্থান : মেরিভিলে, মিশৌরি

* মৃত্যু : ১ নভেম্বর ১৯৫৫

* স্থান : ফরেস্ট হিলস, নিউইয়র্ক

* জীবিকা : লেখক, অধ্যাপক

* উল্লেখযোগ্য রচনা : হাউ টু উইন

ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ইনফ্লুয়েন্স পিপলস

* ১ম স্ত্রী : ললিতা বাউকের

(১৯২৭-১৯৩৭)

* ২য় স্ত্রী : ডরোথি প্রাইস ভেন্ডারপোল

(১৯৪৪-১৯৫৫)

* সন্তান : ডনা ডেল কার্নেগি

ডেল কার্নেগির স্মরণীয় কয়েকটি উক্তি

* সাফল্য হল আপনি যা চান তা হাসিল করা। আনন্দ হল আপনি যা চান তা পাওয়া।

* যদি ভালোভাবে বাঁচতে চান তা হলে মনে রাখবেন- সমস্যাকে তুচ্ছজ্ঞান করতে হবে, আশীর্বাদকে গণ্য করতে হবে।

* কর্মহীন জীবন হতাশার কাফনে জড়ানো একটি জীবন্ত লাশ।

* অনুকরণ নয়, অনুসরণ নয়- নিজেকে খুঁজুন, নিজেকে জানুন, নিজের পথে চলুন।

* আপনি কে বা আপনার কী আছে তার ওপর আপনার সুখ নির্ভর করে না, সুখ নির্ভর করে আপনি কেমন চিন্তা করেন তার ওপর।

* যা আপনাকে পীড়া দেয়, এমন বিষয় নিয়ে এক মিনিটের বেশি ভাববেন না।

* মানুষের গুণ নিয়ে প্রতিযোগিতা করুন, দোষ নিয়ে নয়।

* আপনি ভালোমানুষ হলেই পুরো জগৎবাসী আপনার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে এমনটা আশা করা ঠিক নয়।

* অস্পষ্টতায় ভরা দূরের কিছুর চেয়ে কাছের স্পষ্ট কিছু দেখাই আমাদের দরকার।

* কী কাজ করতে চলেছেন সে সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকার অর্থ, আপনি অন্ধের মতো অন্ধকারের যাত্রী।

* মন্দ সাহচর্যের চেয়ে নিঃসঙ্গতা অনেক ভালো।

* মানুষ যখন রাগান্বিত থাকে, তখন তাকে কোনোভাবে বিরক্ত করা উচিত নয়। কেননা তা থেকে চরম ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হতে পারে।

* পৃথিবীতে ভালোবাসার একটি মাত্র উপায় আছে, সেটা হল প্রতিদান পাওয়ার আশা না করে শুধু ভালোবেসে যাওয়া।

* দুশ্চিন্তা দূর করার এক নম্বর উপায় হল- ব্যস্ত থাকা।

* একটি সুন্দর মুখের কুৎসিত কথার চেয়ে, একটি কুৎসিত মুখের মধুর কথা অধিকতর শ্রেয়।

* জীবনে পাওয়ার হিসাব করুন, তাহলে না পাওয়ার দুঃখ থাকবে না।

বিডিটাইমস৩৬৫ডটকম/আরকে 

Post a Comment

Previous Post Next Post